Sunday, January 8, 2017

মনোনয়ন বাণিজ্য অশুভ আগামীর ইঙ্গিত

আবদুর রহমান সালেহ


সেদিন অপ্রত্যাশিতভাবে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত খবরে চমকে উঠলাম। ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দলীয় সাংসদকেই দিতে হয়েছে কয়েক কোটি টাকা! চমকের পুরোটা এখানেই শেষ না। এই আর্থিক খরচ হয়েছে শুধুমাত্র প্রতীক পাওয়ার জন্য। নির্বাচনকালীন প্রচারণা ও অন্যান্য খরচের পর্বতো সামনে থাকছেই। সে পর্বেও যে বেশ টাকাকড়ি খরচ হবে এতো সহজ সমীকরণ। মূল ব্যাপার হচ্ছে- একজন ইউপি চেয়ারম্যান যদি দলীয় প্রতীক পর্ব থেকে শুরু করে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার মধ্যেই বেশ টাকা গচ্ছা দিয়ে থাকেন; তাহলে নির্বাচিত হয়ে তার দ্বারা অন্তত উন্নয়নমূলক কাজ যে হবে না এতে কারো সন্দেহ আছে? আমিতো খুবই নিশ্চিত- এমন আজব পদ্ধতিতে নির্বাচন করে বিজয়ী প্রার্থীকে বাধ্য হয়েই দুর্নীতি করতে হবে! দুর্নীতি না করলে তিনি তার গচ্ছা দেয়া অর্থ ফেরৎ পাবেন কিভাবে?
অনেকের মনে স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগতে পারে- প্রশাসনের সব স্তরেই তো কম বেশি দুর্নীতি অহরহই হচ্ছে। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সেক্টরের দুর্নীতির খবর এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ ইস্যু। তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও দুর্নীতি করবেন এমনটাই স্বাভাবিক হওয়া উচিত। এর অন্যথা করলে বরং অস্বাভাবিক মনে হবে! নিয়মের ইতিবাচক সিস্টেম ক্রাশ হতে হতে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে বলে আশাহত হন শতকরা হারের বেশিরভাগ মানুষ। তাই বলে পুরোপুরি আশাহত হওয়াটাই কি যুক্তিযুক্ত হবে? আমাদের এই সময়ে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটাতো রয়েছে। কিছু নেতিবাচক সিস্টেমের সামান্যতম প্রতিবাদ এই মাধ্যম ব্যবহারের দ্বারাই করা হোক না। যদিও প্রতিবাদের ক্ষেত্র কোনো সময়েই মসৃণ ছিলো না, মসৃণ থাকে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও বেশিরভাগ ইস্যুর প্রতিবাদ হয়ে থাকে। প্রতিবাদ পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থাও নেয়া হয়ে থাকে- এমন উদাহরণ সম্পর্কে অনেকেই অবগত। মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। যে ইউপি চেয়ারম্যানকে একটা ইউনিয়নের প্রধান হতে কোটি কোটি অর্থ খরচ করতে হয় সেই ভদ্রলোক কি (ভদ্রতার খাতিরে ‘ভদ্রলোক’ শব্দ ব্যবহার করলাম! নীতিহীন লোক কোনদিনই ভদ্র হয় না, অন্তত ভদ্র থাকে না) কখনো নিজ এলাকার উন্নয়নের দিকে খেয়াল রাখতে পারবেন? তিনিতো সবসময় তার টাকা কখন ফিরে পাবেন এমন উৎকণ্ঠায়ই দিন কাটাতে থাকবেন। অবকাঠামো উন্নয়ন, জনসেবা এগুলো তার কাছে তখন বাড়াবাড়ি রকমের বিরক্তির উদ্রেক ঘটাবে। যদিও নির্বাচনী প্রচারণায় বরাবরই নিজেকে উজাড় করে দেয়ার ঘোষণা দিতেই থাকবেন। আর জনগণও বুঝে নেবে- এগুলো প্রার্থী বলার জন্যই বলছেন। কারণ জনগণ বরাবরের মতই এসব নিছক আনুষ্ঠানিকতার সম্মুখীন হয়ে থাকে! যে প্রতিশ্রুতি নিষ্ফল সেই একই প্রতিশ্রুতি বারবার শোনার মানে হয় না। নিরীহ জনগণদের অবশ্য এই প্রতশ্রুতিই বছরের পর বছর ধরে শুনতে হয়। নিরীহ হবার অনেকগুলো সমস্যার এটিও একটি। কিছু করার নেই। স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম সার্ভারে একই বুলি বারবারই আওড়াবে।
মূল বক্তব্য এখনো লেখা হয়ে ওঠেনি। অযথা দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা না থাকলেও কেন জানি টক-শো দেখতে দেখতে লেখার পরিধিও কারণ ছাড়াই দীর্ঘ হয়ে যায়! তারপরও মূল প্রসঙ্গ হচ্ছে- মনোনয়ন বাণিজ্যের এমনসব খবর সত্যি হলে নিকট ভবিষ্যতের জন্য চরম হতাশার বিব্রতকর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। এর কারণ দেশের সবগুলো ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকায়ই যদি এমন হয়- প্রায় চেয়ারম্যানই এলাকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজ বাদ দিয়ে নিজেদের নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাহলে অবকাঠামোর উন্নতি হবে না সামান্য পরিমাণও। দিন দিন অবকাঠামোর উন্নয়ন না হলে এবং মফস্বল পর্যায়ের কল্যাণমূলক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে গেলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে- তার দায়ভার নেয়ার মত কাউকে তখন খুঁজে পাওয়া যাবে না। একবার চিন্তা করে দেখুন- উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড যদি বন্ধই হয়ে যায়, তখন রাস্তাঘাটের টেন্ডার ঠিকই হবে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। ব্রীজের দেয়া বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে তখন ফ্রীজ কিনবেন টাকা দিয়ে নির্বাচনে জেতা প্রার্থী। কারণে কিনবেন, অকারণে কিনবেন! আর এই সময়ের ইয়াম্মি প্রজন্ম ঈদে কিংবা কুরবানীতে গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এসে রাস্তাঘাটের দূরাবস্থা দেখে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগের বন্ধুদের জানান দিবেন এভাবে- ফ্রেন্ডস, অন দ্য ওয়ে টু মাই সুইট হোম। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে রাস্তাঘাটগুলো আপডেট করা হয়না রেগুলার। তাই সবগুলো রাস্তা কেমন যেন হ্যাং গেছে। চলাচলে চরম রিস্কি। প্লিজ প্রে ফর মি...
মনোনয়ন বাণিজ্যের ঘটনা সব স্থানেই সমানভাবে সত্যি হলে আপনি অদূর ভবিষ্যতে এমন স্ট্যাটাসযুক্ত সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পাবেন। একটু ধৈর্য্য ধরুন। সম্ভবত বেশি অপেক্ষা আপনাকে করতে হবে না...

No comments:

Post a Comment